জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক: মির্জা ফখরুল

 



জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক: মির্জা ফখরুল

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ শিরোনামে একটি আদেশ জারি করতে যাচ্ছে। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী এমন আদেশ জারির এখতিয়ার সরকারের নেই, কারণ ‘আদেশ’ আইনের মর্যাদাসম্পন্ন এবং তা জারি করার ক্ষমতা কেবল রাষ্ট্রপতির।

তিনি অভিযোগ করেন, জুলাই সনদের সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব একতরফা ও জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকাই স্বাভাবিক, তাই সংলাপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ভিন্নমতকে গুরুত্ব দেয়নি। সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের প্রস্তাবও আলোচনার এজেন্ডায় ছিল না। অথচ এখন নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, যা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের বাইরে।

গণভোট নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। সময়, ব্যয় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয় বিবেচনায় এর আগে গণভোট আয়োজন করা বাস্তবসম্মত নয়। একই দিনে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠিত হলে তা যৌক্তিক হবে।

তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে আইন বা বিধি পরিবর্তনের প্রয়োজন, সরকার তা অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে করতে পারে—এই বিষয়ে বিএনপিসহ প্রায় সব দল একমত। তবে ভিন্নমত উপেক্ষা করে সনদের খসড়ায় অননুমোদিত সংশোধন আনা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

ফখরুল জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে কয়েকটি দফায় অগোচরে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেমন—শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে টাঙানো সংক্রান্ত বিধান অপসারণের বিষয়ে সম্মতি থাকলেও তা চূড়ান্ত সনদে বাদ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকারই দেশের ভবিষ্যৎ সংস্কার নির্ধারণ করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিম রহমান ও সালাউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ