জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ফখরুলের অভিযোগ





জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ফখরুলের অভিযোগ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই ঐক্য হিসেবে গণ্য হতে পারে না। তাঁর ভাষায়, “জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও প্রতারণা।”

আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদের ‘বিচার সংস্কার নির্বাচন: অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশ’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “এত বড় এক অভ্যুত্থান, এত ত্যাগ-তিতিক্ষা, এত প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ আমরা জাতির কল্যাণে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। বরং সময় যত যাচ্ছে, বিভক্তি তত বাড়ছে। মিডিয়ায়, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়, কিছু পক্ষ একেবারে প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মঙ্গলবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ জমা দেয়। এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “যেসব বিষয়ে কমিশনের সদস্যরা একমত ছিলেন না, সেখানে তাঁরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি ছিল সেই নোটগুলো সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু দেখা গেল, সেগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা ঐক্য নয়—বরং প্রতারণা।”

তিনি আরও বলেন, “এই সময়টা বিভেদের নয়, ঐক্যের সময়। ন্যূনতম বিষয়গুলোয় একমত হয়ে জাতির জন্য একটি সঠিক পথ নির্ধারণ করা দরকার। কিন্তু সেই সুযোগটা নষ্ট করা হচ্ছে—এটা কে করছে, কেন করছে, সবাই বুঝতে পারছেন।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের সব সংকটের মূলেই আছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অভাব। “যে নির্বাচন জনগণের ভোটে গঠিত সংসদ তৈরি করবে, সেই সংসদই সংবিধানের ভেতরে থেকে দেশের সমস্যাগুলোর সমাধান করবে,” বলেন তিনি। “আমরা তাই ৫ আগস্টের বিপ্লবের পরই নির্বাচনের কথা বলেছিলাম। এখন স্পষ্ট হচ্ছে—নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণে ফ্যাসিস্ট ও অরাজক শক্তিগুলো আরও শক্তিশালী হচ্ছে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে পার্লামেন্ট গঠিত হবে, সেটিই সংকট সমাধান করবে। যদি এর বাইরে কিছু ঘটে, তার দায় আপনাকেই নিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “সুপারিশে নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ না থাকা প্রমাণ করে এখানে কোনো ঐকমত্য হয়নি। এর ব্যাখ্যা কমিশনের দেওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদে প্রতিটি দলের ভিন্নমত উল্লেখ আছে। যে দল নির্বাচনে ম্যান্ডেট পাবে, তারা নিজেদের প্রস্তাব অনুযায়ী সেই আপত্তির অংশগুলোর মীমাংসা করবে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “ঐকমত্য ছাড়া কারও ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা টিকবে না।”

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, লেখক ও সাংবাদিক শাহ্নাজ মুন্নী প্রমুখ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ