নতুন শ্রম আইনে পোশাক খাতে অস্থিরতার আশঙ্কা: বিজিএমইএ
বর্তমান শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য ন্যূনতম ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে, যেখানে এই সংখ্যা কমিয়ে ২০ করা হয়েছে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত শিল্পে অন্তঃদ্বন্দ্ব ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরায় সংগঠনটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, “মাত্র ২০ জন শ্রমিক দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ দিলে এমন ব্যক্তিরাও এতে যুক্ত হতে পারেন, যারা প্রকৃত অর্থে ওই কারখানা বা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। এতে কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমবে এবং উদ্যোক্তারা নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিরুৎসাহিত হবেন।”
বিজিএমইএ তাদের আপত্তির কারণ তুলে ধরে কয়েকটি দিক উল্লেখ করেছে—
১. ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ভারসাম্যহীন সিদ্ধান্ত
বিজিএমইএ জানায়, টিসিসি ও ওয়ার্কিং কমিটির আলোচনায় ৫০ থেকে ৫০০ শ্রমিকবিশিষ্ট কারখানায় ন্যূনতম ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের সভায় একতরফাভাবে এটি পরিবর্তন করে ২০–৩০০ শ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে এবং পাঁচটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক তুলনায় দেখা যায়—ভারতে ইউনিয়ন গঠনের জন্য ১০ শতাংশ বা অন্তত ১০০ জন শ্রমিকের সম্মতি প্রয়োজন, পাকিস্তানে এ হার ২০ শতাংশ।
২. ‘ভবিষ্য তহবিল’ ও ‘প্রগতি’—দ্বৈত ব্যবস্থার জটিলতা
বিজিএমইএ জানায়, আগে প্রস্তাব ছিল কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে ‘ভবিষ্য তহবিল’ বা সর্বজনীন পেনশন ‘প্রগতি’—এর মধ্যে একটি বেছে নিতে পারবে। কিন্তু নতুন অনুমোদন অনুযায়ী শ্রমিক চাইলে দুটি স্কিমেই অংশ নিতে পারবেন, যা উদ্যোক্তাকে সমান্তরালে দুটি আর্থিক কাঠামো চালাতে বাধ্য করবে। এতে প্রশাসনিক জটিলতা, ব্যয় বৃদ্ধি ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
প্রতিযোগী দেশগুলোতে একক কাঠামো রয়েছে—ভারতে ইপিএফ বাধ্যতামূলক, ভিয়েতনামে National Pension and Insurance System, আর শ্রীলঙ্কায় শুধুমাত্র EPF কার্যকর।
৩. শ্রমিকের সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা
নতুন সংশোধনীতে ‘শ্রমিক’-এর সংজ্ঞায় ‘কর্মচারী/কর্মকর্তা’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিজিএমইএ বলছে, এতে প্রশাসনিক ও শ্রমিক স্তরের বিভাজন মুছে যাবে, দায়িত্ব বণ্টনে বিভ্রান্তি ও সিদ্ধান্তগ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হবে।
৪. প্রক্রিয়াগত অবিচার ও আস্থার সংকট
সংগঠনটির দাবি, ওয়ার্কিং কমিটি ও টিসিসি’র সভায় সর্বসম্মতভাবে গৃহীত অনেক প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদ আলোচনাবিহীনভাবে পরিবর্তন করে অনুমোদন দিয়েছে। এতে শুধু শিল্প মালিক নয়, শ্রমিক ও সরকারের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থা দুর্বল হবে।
৫. বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব
বিজিএমইএ মনে করে, প্রতিবেশী প্রতিযোগী দেশগুলো ইতোমধ্যেই বিনিয়োগবান্ধব শ্রমনীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমবে, রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং শিল্পখাতে অস্থিরতা বাড়বে।
বিজিএমইএ জোর দিয়ে বলেছে, শ্রম আইন এমন হতে হবে যা শ্রমিক ও শিল্প উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে, বাস্তবসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ হয়। সংগঠনটি অনুমোদিত ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে, যাতে নতুন আইন শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা নষ্ট না করে বরং টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি, পরিচালক ও বর্তমান নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।
 
0 মন্তব্যসমূহ