জুলাই সনদ আজ রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে দিচ্ছে ঐকমত্য কমিশন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আজ মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি পাঠাবে। তবে সনদে উল্লিখিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কোনো সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। এই বিষয়ে কমিশন পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৃথকভাবে সুপারিশ দেবে, যা জুলাই সনদের অংশ হবে না।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। প্রথম ধাপে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশন—সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন—এর প্রস্তাবগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দুই দফায় অনুষ্ঠিত এসব আলোচনায় ৩৩টি ও ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আলোচনার মাধ্যমে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়, যার ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ।
আগামী শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ আয়োজনে ঐকমত্য কমিশনকে সহায়তা করছে। প্রায় তিন হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সনদে সই করার জন্য ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে সবগুলো দল দুজন করে স্বাক্ষরকারীর নাম কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সব দল সই করবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
কমিশন সূত্র জানায়, সনদের বিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে আর নতুন কোনো মতামত নেওয়া হবে না। গত ১১ সেপ্টেম্বর পাঠানো খসড়া অনুলিপিই মূলত চূড়ান্ত আকারে পাঠানো হচ্ছে, যেখানে কেবল কিছু ভাষাগত সংশোধন আনা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি প্রদর্শনসংক্রান্ত সংবিধানের ৪(ক) অনুচ্ছেদ বিলুপ্তি বিষয়ে আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছিল কমিশন; প্রায় সব দলই এর পক্ষে মত দেয়। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না—এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সংসদ।
জুলাই জাতীয় সনদে তিনটি ভাগ রয়েছে:
১️⃣ সনদের পটভূমি
২️⃣ ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব
৩️⃣ সনদ বাস্তবায়নের ৭ দফা অঙ্গীকারনামা
প্রথমে জুলাই মাসেই সনদে সই করার লক্ষ্য ছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত না হওয়ায় তা বিলম্বিত হয়। যদিও কমিশন আগেই জানিয়েছিল—বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সনদের অংশ হবে না।
গত ৩১ জুলাই সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শেষ হয়। পরবর্তীতে কয়েকটি দলের অনুরোধে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশন আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করে, যা ৯ অক্টোবর শেষ হয়।
সেই আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। তবে গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে মতভিন্নতা রয়ে গেছে।
কমিশন জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে সরকারকে বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সুপারিশ পেশ করা হবে। ইতিমধ্যে ঐ তিন দলের সঙ্গে মতপার্থক্য কমাতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। তবে এখনো গণভোটের ভিত্তি, সময় ও প্রশ্নাবলি নিয়ে একমত হওয়া যায়নি।
ফলে শুক্রবারের মধ্যেই এই বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত করা যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন,
“জুলাই সনদের অনুলিপি মঙ্গলবার দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। কমিশন আশা করছে, এর মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ দেওয়া সম্ভব হবে।”
0 মন্তব্যসমূহ