ট্রাম্পের সঙ্গে শির বৈঠকের আগে কেন দুর্লভ খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করছে চীন

 



ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের আগে কেন চীন আবার দুর্লভ খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি জারি করল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের রাষ্ট্রপ্রধান সি চিনপিংয়ের সম্ভাব্য বৈঠককে কেন্দ্র করে চীন আবারও দুর্লভ খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কড়া করে দিয়েছে। এই বৈঠকটি এই মাসের শেষভাগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বিশ্বে প্রক্রিয়াজাত দুর্লভ খনিজ ধাতু এবং দুর্লভ খনিজ চুম্বকের প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি মজুদ চীনের হাতে। ইলেকট্রিক গাড়ি থেকে বিমান ইঞ্জিন ও সামরিক রাডার—প্রায় সবই তৈরিতে এসব উপকরণ ব্যবহার হয়। চীন এই কাঁচামালগুলোর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে সরবরাহকে নির্দিষ্ট সীমায় রাখছে।

নতুন কী ঘোষণা করা হয়েছিল

চীন পূর্ব থেকেই দুর্লভ খনিজ রপ্তানিতে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে। সম্প্রতি তারা আরও পাঁচটি নতুন উপকরণকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের তালিকায় যুক্ত করেছে; ফলে মোট এখন ১২টি উপকরণ সীমাবদ্ধতার আওতায় পড়েছে। পাশাপাশি দুর্গম খনিজ আহরণ ও পরিশোধনে ব্যবহৃত অনেক যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে—চীনই এই দুই ক্ষেত্রেই শীর্ষে অবস্থান করে।

নতুন বিধি অনুযায়ী রপ্তানিকারকদের বিশেষ লাইসেন্স নিতে হবে। এপ্রিলে একই ধরনের নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হলে বিশ্বজুড়ে দুর্লভ খনিজ চুম্বকের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল; তখন অনেক অটোমোবাইল কারখানাকে উৎপাদন স্তব্ধ করতে হয়েছিল। এবারও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে কিনা নিয়ে শঙ্কা তৈরি। চীন বলছে, লাইসেন্স অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করা হবে, কিন্তু প্রতিরক্ষা কাজে ব্যবহারের জন্য অনুরোধ থাকলে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর ও নির্দিষ্ট ধরণের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পর্কিত কাজে ব্যবহারের আবেদনগুলো কঠোরভাবে যাচাই করা হবে।

বাহিরের উৎপাদনকারীদের ওপর বিধিনিষেধকথা কি বোঝায়?

চীন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছে যে, বিদেশি উৎপাদনকারীদের ওপরও এই নিয়ন্ত্রণ প্রযোজ্য হবে—বিশেষত যেসব সংস্থা চীনা উপকরণ বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ধরনের দুর্লভ খনিজ পণ্য উৎপাদন করে। অর্থাৎ, যদি কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যে চীনের দুর্লভ খনিজ ব্যবহার করে, তাহলে সেই পণ্য বাজারজাত করার আগে বেইজিংয়ের অনুমতি নিতে হবে। একই নিয়ম চীনা উপকরণ ব্যবহার করে ‘দুর্লভ খনিজ চুম্বক’ তৈরি করান নির্মাতাদের ওপরও প্রযোজ্য হবে। এর ফলে চীনের সরবরাহশৃঙ্খলে আধিপত্য বজায় রাখতে তারা আরও সক্ষম হবে—অর্থাৎ অন্য দেশ বা প্রতিষ্ঠানকে বিকল্প তৈরি করা কঠিন করে তোলা হচ্ছে।

সব বিদেশি প্রতিষ্ঠান কি এ নিয়মের আওতায় হবে?
না। চীনের নিয়ম সব ধরণের পণ্যে প্রযোজ্য হবে না; এটি নির্দিষ্ট দুর্লভ খনিজ উপকরণ ও সংশ্লিষ্ট চুম্বক উৎপাদনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানিতে তৈরি একটি ওয়াশিং মেশিনে যদি চীনের ‘দুর্লভ খনিজ চুম্বক’ থাকেও, তা অন্য ইউরোপীয় দেশে বিক্রি করতে হলে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে না—কিন্তু যদি জার্মান প্রতিষ্ঠান চীনা উপকরণ ব্যবহার করে নিজেই দুর্লভ খনিজ চুম্বক তৈরি করে, তখন তারা বেইজিংয়ের কাছ থেকে অনুমতি নেবেই।

চীন নতুন নিয়ম কীভাবে কার্যকর করবে?

এটি এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। চীনের রপ্তানির নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন হলে জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে; তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন। তবুও, চীনা সরবরাহকারীরা তাদের নিয়ম মেনে চলে না এমন বিদেশি গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে—যা বিদেশি কোম্পানিদের সতর্ক করবে এবং বিকল্প উৎস খুঁজতে বাধ্য করবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে দুর্লভ খনিজের বিকল্প উৎস তৈরির প্রচেষ্টা আরও ত্বরান্বিত হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ