জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা
‘বীর ওসমান হাদি, বিদায় দিতে আসিনি—তুমি থাকবে সব বাংলাদেশির বুকের ভেতর’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বীর ওসমান হাদি, তোমাকে বিদায় জানাতে আমরা এখানে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতরেই আছ। বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন তুমি সব বাংলাদেশির হৃদয়ে থাকবে—এটা কেউ মুছে দিতে পারবে না।’
শনিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজার আগে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রিয় হাদি, আজ আমরা বিদায় জানাতে আসিনি; এসেছি তোমার কাছে ওয়াদা করতে—তুমি যে কথা বলে গেছ, আমরা যেন তা বাস্তবায়ন করতে পারি।’ তিনি বলেন, দেশের মানুষ হাদির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছে; সেই দৃষ্টিভঙ্গি সবার মনে জাগ্রত রাখতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, হাদি এমন এক মন্ত্র দিয়ে গেছেন, যা জাতি কখনো ভুলবে না। সেই মন্ত্র চিরকাল কানে বাজবে—‘চির উন্নত মম শির’। এই শির কখনো নত হবে না। এই মন্ত্রই আমাদের কর্মে প্রমাণ করতে হবে—বাংলাদেশ দুনিয়ার সামনে মাথা উঁচু করেই চলবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রিয় হাদি, তুমি নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলে। সেই পথে আমাদের শিখিয়ে গেছ—নির্বাচন কীভাবে করতে হয়, প্রচার কীভাবে চালাতে হয়, মানুষকে কষ্ট না দিয়ে কীভাবে কথা বলতে হয়, বিনীতভাবে মানুষের কাছে যেতে হয়। আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করেছি এবং তা বাস্তবায়ন করতে চাই—যাতে আমাদের রাজনীতিতে হাদির উপস্থিতি সদা জাগ্রত থাকে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হাদি, তুমি হারিয়ে যাবে না। কেউ তোমাকে ভুলতে পারবে না। যুগ যুগ ধরে তুমি আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমরা বারবার তোমার মন্ত্র স্মরণ করব—“চির উন্নত মম শির”। আজ তোমাকে আল্লাহর হাতে আমানত রেখে গেলাম। তোমার স্মৃতিকে ধারণ করেই জাতির অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাব।’
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি খুনি, পরিকল্পনাকারী ও সহযোগীসহ পুরো চক্রকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার নিশ্চিত না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘জীবন দিয়ে দেব, তবু ইনসাফের লড়াই ছাড়ব না।’
দুপুর ২টার পর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষ অংশ নেন। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার পাশে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। জানাজার আগে ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বক্তব্য দেন।
জানাজা উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সংসদ ভবনের দক্ষিণাংশের মাঠসমূহ ও আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মাথায় আহত হন ওসমান হাদি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ শুক্রবার দেশে এনে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের মর্গে রাখা হয়। ওসমান হাদির মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

0 মন্তব্যসমূহ