জোটবদ্ধ নির্বাচনে প্রতীক ইস্যুতে বিড়ম্বনায় বিএনপি

 



জোটবদ্ধ নির্বাচনে প্রতীক ইস্যুতে বিড়ম্বনায় বিএনপি

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছে বিএনপি। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের কারণে প্রতীক–বিধান নিয়ে দলটি এখন বেশ বেকায়দায় পড়েছে। সংশোধিত আইনে জোট করলেও প্রতিটি দলকে নিজস্ব প্রতীকে ভোটে অংশ নিতে হবে—যা ছোট দলগুলোর জয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছে বিএনপি। এ নিয়ে শরিক ছোট দলগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএনপি আবারও আরপিও সংশোধনের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরির চিন্তা করছে। দলটি আশা করছে, মিত্র ছোট দলগুলোও এই দাবিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি নিবন্ধিত দল আরপিওর ২০(১) ধারার সংশোধনী বাতিলের আবেদনও করেছে।

আসন ভাগাভাগি–সংক্রান্ত জটিলতা

যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য কোন আসনগুলো ছাড় দেওয়া হবে—এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনায় আছেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি হতে পারে।
তবে বিএনপি মনে করছে, প্রতীকের বিধানই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা। কারণ, নিজস্ব প্রতীকে ভোট করলে ছোট দলগুলোর পক্ষে জয় পাওয়া কঠিন হতে পারে।

ছোট দলগুলোর আশঙ্কা

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের ভাষ্য—জোটবদ্ধ নির্বাচন করলে ছোট দলগুলোর পছন্দ অনুযায়ী জোটের বড় অংশীদারের প্রতীকে ভোট করার অধিকার থাকা উচিত ছিল, যেটি আগে কার্যকর ছিল। কিন্তু নতুন আইনে সেই সুযোগ সংকুচিত হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই লাভবান হতে পারে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীও মনে করেন, জোট করলেও প্রসিদ্ধ প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ গণতান্ত্রিক অধিকার। আরপিওর সংশোধনী সেই অধিকার সীমিত করেছে।

বিতর্ক ও সংশোধনের প্রেক্ষাপট

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই প্রতীক–বিধান নিয়ে আগে থেকেই ভিন্ন অবস্থান নিয়ে এসেছে। বিএনপি চাইছিল জোটের যেকোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করার আগের নিয়মটি বজায় থাকুক।
অন্যদিকে জামায়াত চাইছিল—জোট করলেও প্রতিটি দলকে নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। পরে সরকার সেই বিধানকেই আরপিওতে সংযোজন করে।

এই সিদ্ধান্তে বিএনপি ছাড়াও তাদের সঙ্গে জোটে আসতে ইচ্ছুক ছোট দলগুলোও অস্বস্তি প্রকাশ করছে।

জোটের ভবিষ্যৎ ও সমঝোতার সম্ভাবনা

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)–এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, নতুন সংশোধনী গণতন্ত্রের পরিসর সংকুচিত করেছে; তাই এ বিধান পরিবর্তন হওয়া উচিত। জোটে আলোচনা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, নতুন নিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিএনপি; আর লাভবান হতে পারে জামায়াত ও বিএনপির বাইরে থাকা ছোট দলগুলো। কারণ, বিএনপির প্রতীক ‘ধানের শীষ’ ছোট দলের প্রার্থীদের জয়ের ক্ষেত্রে বড় সহায়ক—যা এখন আর ব্যবহার করা যাবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মনে করেন, একটি দল কোন প্রতীকে নির্বাচন করবে—এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আরপিওর সংশোধনী এই অধিকারকে ব্যাহত করছে।

আসন ভাগাভাগির অগ্রগতি

বিএনপি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী—শরিক দলগুলোর ভূমিকা, নেতৃত্ব, ভবিষ্যতে সরকার গঠনে সম্ভাব্য প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিবেচনায় অন্তত ২৫টি আসন ছাড়ের বিষয়ে ভাবছে দলটি।
এ ছাড়া এনসিপি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গেও সমঝোতার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে জামায়াতসহ আটটি দল যুগপৎ আন্দোলনে থাকলেও তারা নির্বাচনী জোট কি না—এখনো স্পষ্ট নয়। তবে জামায়াত–ঘনিষ্ঠ দলগুলো প্রতীকের বিষয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয়; তারা নিজ নিজ প্রতীকে লড়তে প্রস্তুত এবং সমঝোতা হলে একে অপরকে সমর্থন করার কথা বলছে।

বিএনপির শেষ দুশ্চিন্তা

বিএনপির মূল উদ্বেগ—শরিকরা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলে ভোটের আগেই আসন হারানোর ঝুঁকি বাড়বে। আবার আসন ছাড়লেও বিএনপির ভেতর বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ালে শরিকদের জয়ের সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ